হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, আয়াতুল্লাহ উজমা নূরে হমাদানীর কার্যালয়ে আয়োজিত সাপ্তাহিক মাহফিলে হুজ্জাতুল ইসলাম হুসেইনি কুম্মী এই বক্তব্য দেন। তিনি বলেন: উদাহরণ স্বরূপ—শৌর্যবীর্য (সাহসীতা) হল মাঝামাঝি গুণ, যার দুই চরম প্রান্ত হল বেপরোয়া সাহস (অতিরিক্ততা) এবং কাপুরুষতা (অবহেলা)। তেমনি দানশীলতা হল মাঝামাঝি গুণ, যার চরম দুটি দিক হলো অপচয় ও কৃপণতা।
তিনি বলেন: এই মডেল বিশ্বাস বা আকীদার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। কেউ কেউ ইমামদের (আ.) সম্পর্কে অতিরিক্ত প্রশংসার মাধ্যমে পথভ্রষ্ট হয়, আবার কেউ কেউ শত্রুতা প্রদর্শনের মাধ্যমে ধ্বংসের পথে চলে যায়।
ইমাম হাসান (আ.) ও ইমাম হুসাইন (আ.)-এর জীবনধারা থেকে শিক্ষণীয় বিষয়
তিনি সাফিনাতুল বিহার নামক গ্রন্থ থেকে মুহাদ্দিসে কুমীর বর্ণনা উল্লেখ করে বলেন:
আরাফার দিনে ইমাম হুসাইন (আ.) রোজা রেখে কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে সাধারণ ইফতারের প্রস্তুতি নিতেন, অন্যদিকে ইমাম হাসান (আ.) ঐদিন অতিথিদের জন্য বাহারি খাবারসহ এক বৃহৎ দাওয়াতের আয়োজন করতেন।
এই ঘটনা প্রমাণ করে: সকল ইমাম (আ.)-এর জীবনে বৈচিত্র্য থাকলেও একটি মূলনীতি ছিল—নিজ নিজ দায়িত্ব পালন।
তিনি বলেন, ইমাম হাসান (আ.) সমালোচনামূলক প্রশ্ন করা এক ব্যক্তিকে বুকে জড়িয়ে ধরে দয়া ও নম্রতার মাধ্যমে দাওয়াতের শিক্ষায় আমাদের দিকনির্দেশনা দেন। যা আজকের দিনে বিরল, যেখানে সামান্য প্রশ্নেও কঠোর প্রতিক্রিয়া দেওয়া হয়।
সতর্কবার্তা: নফল আমলকে সামাজিক বাধ্যবাধকতায় রূপান্তর নয়
এই হাওযা শিক্ষক বলেন: কিছু চরমপন্থী গোষ্ঠী এমন পরিবেশ সৃষ্টি করে ফেলেছে, যেখানে মানুষ মনে করে, নফল ইবাদত না করলে ঈমানের ঘাটতি হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন: কিছু সম্মানিত মারাজে (ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ) বলেছেন:
ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলোর জন্য একাধিক দশকের আয়োজনকে যদি সামাজিক বাধ্যবাধকতায় রূপান্তর করা হয়, তাহলে তা সাধারণ মানুষের উপর চাপ সৃষ্টি করে।
কুরআনের মডেল “نِعْمَ الْعَبْدُ” (সেরা বান্দা) ও নমনীয়তা
তিনি সূরা সাদের ৩০ ও ৪৪ নম্বর আয়াতের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন: আল্লাহ তাআলা সুলাইমান (আ.)-এর রাজত্ব এবং আইউব (আ.)-এর ধৈর্য—উভয়কেই “নিম'আল আব্দ” (কী চমৎকার বান্দা) বলে প্রশংসা করেছেন।
এটি প্রমাণ করে, যে কোনো অবস্থায় “দায়িত্ব পালন”-ই মূল চাবিকাঠি।
উপসংহার: ধর্মে ভার চাপানো নয়, ভারসাম্য রক্ষা করুন
শেষে তিনি ইমাম সাদিক (আ.)-এর একটি হাদিস পাঠ করে বলেন: আল্লাহ এমন ব্যক্তিদেরও পছন্দ করেন না যারা শরিয়তের প্রদত্ত সুবিধাগুলো গ্রহণ করে না।
তিনি বলেন: আমরা যেন মানুষের ওপর কঠিন ধর্মীয় পরিবেশ চাপিয়ে না দিই, বরং তাদেরকে ভারসাম্যপূর্ণ ও নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী আমলের দিকে উৎসাহিত করি।
আপনার কমেন্ট